মো. সাজ্জাদ হোসেন।। সম্মুখে যাকে দেখা যায় তাকে নিজের চেয়ে উত্তম মনে করার নামই বিনয়। বিদ্যা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য মনুষ্যত্বের বিকাশ। বিদ্যা শিক্ষা মানুষকে চরিত্রবান করে, বিনয়ী করে।
ইমারসন বলেছেন “বিদ্যার গূঢ় রহস্যই হলো শিক্ষার্থীদের সম্মান করা।” বিদ্যা অর্জনের মাধ্যমে মানুষ বড় বড় ডিগ্রী অর্জন করতে পারে। কিন্তু বিদ্যার সাথে বিনয় না থাকলে বিদ্যা শিক্ষা পরিপূর্ণ হয় না। বড় বড় ডিগ্রী, প্রভাব প্রতিপত্তি, ধনসম্পদ অর্জন সব কিছুই জীবনে অর্থহীন যদি ব্যক্তি জীবনে বিনয় না থাকে। কথাবার্তায় বিনয় ভালো চরিত্রের লক্ষণ।
রাজা সলোমান বলেছেন “অহংকার মানুষের পতন ঘটায়; কিন্তু বিনয় মানুষের মাথায় সম্মানের মুকুট পরায়।” পাঠ্য পুস্তক বা পাঠ্য বইয়ের প্রতিটি লাইন পড়ে মুখস্থ করে পরীক্ষায় কৃতকার্য হলেই বিনয়ী হওয়া যায় না। বিনয় মানুষের নৈতিকশিক্ষা। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্র থেকেই মানুষকে বিনয়ী হওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। উচ্চতর ডিগ্রী, টাকাপয়সা ধনদৌলত, প্রভাব প্রতিপত্তি, বড় বড় পদ পদবী অনেক সময় মানুষকে অহংকারী করে তোলে।
বিনয় অর্জনকারী ব্যক্তিকে কেউ হিংসা করতে পারে না। বিনয়ী ব্যক্তিকে সবাই সম্মান করে, প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকে। বিনয়ী ব্যক্তি সবাইকে যেমন সম্মান করে। সাধারণ মানুষও বিনয়ী মানুষকে সম্মান করে। বিনয়ী মানুষ সমাজে সকল মানুষের শ্রদ্ধার পাত্র। বিনয়ের চর্চাটা যখন মানুষ ভুলে যায় তখন নৈতিক চরিত্রের অধঃপতন ঘটে। সদা সত্য কথা বলা যেমন মহৎ গুণ তেমনি সর্বদা বিনয় প্রদর্শন মানুষের মহৎ গুণ। সভ্য মানুষের আচরণ সব সময় বিনয়ী হবে। অসদাচারণ মানুষকে বিপদের দিকে ঠেলে দেয়। কিন্তু বিনয় মানুষকে বিপদ থেকে রক্ষা করে।
শিশু মনের বিকাশের সময়ই সন্তানকে বিনয়ের শিক্ষা দেওয়াটা জরুরী। বিনয়ী হওয়ার শিক্ষা একদিনে অর্জন করা যায় না। দিনে দিনে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। পরিবার থেকেই বিনয়ের শিক্ষা শুরু হয়। মা একজন সন্তানের প্রথম শিক্ষক। মা, বাবা, ভাইবোন অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের নিকট থেকেও শিশু বিনয়ের শিক্ষাটা গ্রহণ করতে পারে।
বর্তমান সময়ে বিনয় হারিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নৈতিক শিক্ষা। নৈতিক শিক্ষার বিষয়টি পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত হলেও বাস্তব জীবনে বিনয়ের চর্চাটা সবাই ভুলে যায়। পারিপার্শ্বিক শিক্ষা সকল নৈতিক শিক্ষা থেকে ছাত্রছাত্রীকে আজ দূরে ঠেলে দিচ্ছে। সমাজে বিনয়ী মানুষ খুঁজে পাওয়াটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। মানুষকে অসম্মান করার প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। অন্যের মতামতকে সম্মান করা, অন্যের মতামতটাকে মেনে নেওয়ার মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। সবাই নিজের মতামতকেই প্রতিষ্ঠিত করতে সর্বদা ব্যস্ত। সব সসময় নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি দেখানোর জন্য সচেষ্ট। বর্তমান সময়ে পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আরও বড় দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বিনয়ী হওয়ার শিক্ষা দান করা। বিনয় ভুলে গেলে সকল নৈতিক গুণাবলির মৃত্যু ঘটে। বিনয় ছাড়া নৈতিক শিক্ষা মূল্যহীন।
নম্রতা-ভদ্রতা গুণ দুটো মানুষের জীবনের পুরাতন ঐশ্বর্য। -জন স্টুয়ার্ট মিল
লেখকঃ প্রভাষক, হিসাববিজ্ঞান লাউর ফতেহপুর ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ কলেজ, নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
Leave a Reply