মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ভূঞা
বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু সমার্থক। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন বাঙালির হাজার বছরের পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ তথা স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং সেই স্বাদ এ দেশের ভূখানাঙ্গা গরীব দুঃখী অসহায় মানুষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে। রূঢ় বাস্তবতা বঙ্গবন্ধু জন্মেছিলেন বলেই আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, একটি মানচিত্র ও পতাকা, ন্যায্য অধিকার। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। বাংলাদেশের গৌরবময় সংগ্রাম ও অর্জন, বিশেষ করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ বলতেও বুঝায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে পেয়েছিলেন, সোহরাওয়র্দী ও ভাসানীর মতো নেতাদের আর সহকর্মী হিসেবে পেয়েছিলেন, তাজউদ্দিনসহ জাতীয় চার নেতাকে। তিনি তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা এবং কর্মতৎপরতার মাধ্যমে বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্ন’র যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, বাষট্টি’র শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টি’র ৬ দফা, উনসত্তরের গণ আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন সর্বোপরি একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সিঁড়ি বেয়ে হয়ে উঠেন বাঙালির জিয়ন কাঠির নায়ক, বাংলার অবিসংবাদিত নেতা। অধিষ্ঠিত হন জাতির জনকের আসনে। ঠাঁই করে নেন বাঙালির হৃদয়ের মনিকোঠায়। বঙ্গবন্ধুর একচ্ছত্র নেতৃত্বে একটি দেশ ও জাতির জন্ম দেয়া বিশ্বের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে পূনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু যখন বলিষ্ঠ ভূমিকায় অবতীর্ণ, দেশের মানুষ যখন স্বাধীনতার স্বপ্নস্বাদ আস্বাদনে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজে নিমগ্ন ছিলেন, ঠিক তখনই পাকিস্তানি ধ্যান ধারণায় পরিপুষ্ট প্রতিবিপ্লবী শক্তি এবং প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নেয়। ষড়যন্ত্রীরা প্রবলভাবে আঘাত হানে বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর। তারা সমূলে ধ্বংস করতে চেয়েছিল বাংলার কৃষ্টি, সভ্যতা, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনাকে। তেমনি এক প্রতিকুল পরিবেশে সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দীর্ঘ ছয় বছর পর দুঃসহ জীবন নিয়ে বাঙালির মুক্তির দিশারী হিসেবে দেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মুক্তিকামী এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী, বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, নারী পুরুষ নির্বিশেষে আপামর সাধারণ জনগণকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করে রূখে দেন স্বাধীনতাবিরোধীদের সকল অপতৎপরতা।
বিশ্ববরেণ্য চিন্তাবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বিগত সাড়ে তিন দশকের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনকে কাজে লাগিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে বাংলাদেশকে একটি উদার গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর প্রতিবিপ্লবী অপশক্তি পাকিস্তানী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর লুলুপ দৃষ্টি থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিকে গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের মূলধারায় ফিরিয়ে আনা, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জেল হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং ২১ আগস্ট গ্রেণেড হামলার বিচারের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দেশকে অর্থনৈতিক সম্মৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে শেখ হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অনেক পেছনে ফেলে দিতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে উন্নয়ন পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিয়ে ধারাবাহিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি আজ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বেশ সমাদৃত। শেখ হাসিনা আজ বিশ্বের বিষ্ময়, বিশ্ব রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যমনি। তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা, প্রজ্ঞা ও দুরদর্শিতা বলে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। তাই আত্মোপলব্ধি থেকেই দৃঢ়চিত্তে বলতে চাই- ”শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নাই। আয়রে আয় ও বাঙালি আয়-শেখ হাসিনা হাল ধরেছে বঙ্গবন্ধুর নায়।”
Leave a Reply